টাইটান - শনির উপগ্রহ

টাইটান শনি গ্রহের একটি উপগ্রহ, ১৬৫৫ সালের ২৫শে মার্চ টাইটান আবিষ্কার করেন ডাচ জ্যোতির্বিদ ক্রিস্টিয়ান হাইগেন। শনি গ্রহের বৃহত্তম উপগ্রহ ও সৌরজগতের দ্বিতীয় বৃহত্তম উপগ্রহ। বৃহস্পতি গ্রহের উপগ্রহ গ্যানিমিড হল সবচেয়ে বড় উপগ্রহ। টাইটান একটি আকর্ষণীয় উপগ্রহ বিভিন্ন কারনে, টাইটানে রয়েছে বায়ুমণ্ডল, রয়েছে তরল নদী, হ্রদ, সাগর , তবে নদী সাগর হল মিথেন ও ইথেনের সাগর।  পৃথিবীর মত  টাইটানে হয় বৃষ্টি, টাইটানের বায়ুমণ্ডলের প্রধান উপাদান নাইট্রোজেন।

তথ্য

- শনির বৃহত্তম উপগ্রহ

- আকারে টাইটান আমাদের চাঁদ থেকে বড়, এমনকি বুধ গ্রহ থেকেও বড়

- টাইটান শনি গ্রহকে কেন্দ্র করে আবর্তন করে, শনি থেকে দূরত্ব ১২ লক্ষ কিমি।

- একবার শনি গ্রহকে আবর্তন করতে সময় লাগে ১৫ দিন ২২ ঘণ্টা।

- গড় ব্যাসার্ধ ২৫৭৫ কিমি 

​- তাপমাত্রা -১৭৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস (মাইনাস) 

- সূর্য থেকে আলো আসতে সময় নেয় প্রায় ৮০ মিনিট

পৃষ্ঠ

টাইটানের ভূপৃষ্ঠে অনেক নদী ও হ্রদ আছে, মূলত নদী ও হ্রদ মিথেনে পরিপুর্ন। পৃষ্ঠে অপেক্ষাকৃত কম খাদ দেখতে পাওয়া যায়, ধারনা করা হয়, টাইটানের বায়ুমণ্ডল নতুন এবং অতীতের বিভিন্ন আঘাতের কারণে স্রিস্থ খাদ বায়ুপ্রবাহ ও তরল মিথেনের প্রবাহের জন্য সময়ের  সাথে সাথে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। ভূপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় -১৭৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আগেই বলা হয়েছে টাইটানের রয়েছে ঘন বায়ুমণ্ডল, মজার ব্যাপার হল, টাইটানে বৃষ্টি ধীরগতিতে পড়বে। যেমন, পৃথিবীতে বৃষ্টি পড়ে প্রতি সেকেন্ডে ৯.২ কিমি গতিতে, আর টাইটানে বৃষ্টি পড়বে প্রায় প্রতি সেকেন্ডে ১.৬ মিটার গতিতে।

বায়ুমণ্ডল

​টাইটান সৌরজগতের একমাত্র উপগ্রহ যার বায়ুমণ্ডল আছে। বায়ুচাপ পৃথিবীর চেয়ে একটু বেশি, পৃথিবী থেকে প্রায় ৬০% . বেশি। টাইটান আকারে ছোট হওয়ায় অভিকর্ষ বল কম, তাই বায়ুমণ্ডল প্রায় ৬০০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। বায়ুমণ্ডলের প্রধান উপাদান নাইট্রোজেন ৯৫ ভাগ, শতকরা ৫ ভাগ মিথেন ও সামান্য অন্যান্য কার্বন যৌগ রয়েছে। বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে মিথেন এবং নাইট্রোজেন সূর্যের অতি বেগুনী রশ্মি এবং শনির চৌম্বক ক্ষেত্রের প্রভাবে ভেঙ্গে যায়। এই ভেঙ্গে যাওয়া পরমাণু ( মিথেন ও নাইট্রোজেন) আবার পুনর্গঠন করে বিভিন্ন জৈব - যৌগ গঠন করে। 

ক্যাসিনি-হাইগেন অভিযান

​ক্যাসিনি-হাইগেন মুলত দুটি অংশে বিভিক্ত, নভোযান ক্যাসিনি যা টাইটানকে প্রদক্ষিন করে ও বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে। আর হাইগেন প্রোব, যা টাইটানের ভূপৃষ্ঠে অবতরন করে। নাসা ও ইসা যৌথ ভাবে ২০০৪ সালে ক্যাসিনি-হাইগেন মহাকাশযান প্রেরণ করে এবং ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই মিশনের সমাপ্তি ঘটে। ক্যসিনি নভোযান টাইটানকে প্রায় ১০০ বার ফ্লাই-বাই করে এবং ২০০৫ সালে ক্যসিনি মহাকাশযান থেকে হাইগেন প্রোব টাইটানের ভূমিতে অবতরণ করে এবং প্রায় অবতরনের প্রায় ১ ঘণ্টা পর্যন্ত তথ্য সরবরাহ করে, তারপর হাইগেন প্রোবের ব্যাটারি শেষ হয়ে যাওয়ার পর আর কোন যোগাযোগ হয়নি। এই মিশন অনেক দিক থেকে একটি সফল মিশন, ক্যাসিনি-হাইগেন মিশনের আগে আমাদের টাইটান সম্পর্কে ধারনা ছিল খুবই সীমিত। মিশনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কারঃ

-         তরল মিথেন ও ইথেনের সাগরের সন্ধান

-         ভূপৃষ্ঠের নিচে তরল পানি ও আমোনিয়ার সাগরের সন্ধান

-         বায়ুমণ্ডলের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ।

তথ্য সূত্র

১। https://en.wikipedia.org/wiki/Titan_(moon)

২। টাইটান, নাসা  http://solarsystem.nasa.gov/planets/titan

​৩। By Kelvinsong - Own work, CC BY 3.0, https://commons.wikimedia.org/w/index.php?curid=27800749

​৪। By ESA/NASA/JPL/University of Arizona - http://photojournal.jpl.nasa.gov/catalog/PIA07232 (direct link), Public Domain, https://commons.wikimedia.org/w/index.php?curid=2410548